প্রকাশিত: Mon, Dec 25, 2023 7:31 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 10:52 AM

[১]জুড়ীতে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে


স্বপন দেব: [২] মৌলভীবাজারের জুড়ীতে দুটি শর্তে দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। পরিবেশ অধিদফতর থেকে অবস্থানগত ছাড়পত্র নেওয়া এবং প্রকল্পভুক্ত জমিতে কোনও গাছ ও পাহাড় না কাটার শর্তে গড়ে তোলা হবে এ সাফারি পার্ক। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার চকোরিয়ায় দেশের প্রথম সাফারি পার্কটি অবস্থিত। এই পার্কের অন্য নাম ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাফারি পার্ক। এটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে গাজীপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নামে পরিচিত।  

[৩] চায়ের রাজধানী নামে খ্যাত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।  

[৪] পরিবেশ ও বন অধিদফতর সূত্র জানায়, এই সাফারি পার্কের মূল উদ্দেশ্য হলো বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, দেশের বিরল ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীকে নিজ নিজ আবাসস্থল এবং আবাসস্থলের বাইরে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, ইকো-ট্যুরিজমের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, চিত্তবিনোদন, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা, বন্যপ্রাণীর খাওয়ার উপযোগী ফলজ ও মিশ্র প্রজাতির বাগান সৃজন, বন্যপ্রাণী-বানর, মায়া হরিণ, বন বিড়াল, খরগোশ, বেজি, বনরুই, ছোট খাটাশ, শিয়াল, খেঁকশিয়াল ও অজগরসহ বিপন্ন বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি করা। 

[৫] তাছাড়া বিরল ও বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী- বাঘ, চিতাবাঘ, সম্বর হরিণ, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণ এবং অন্যান্য তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা, এশীয় হাতি, গন্ডার, পাখি পরিযান, জলচর পাখি, বনছাগল, সিংহ, স্লথ ভালুক, এশীয় কালো ভাল্লুক, স্বাদুপানির কুমির, লোনা পানির কুমির, নীলগাই, জলহস্তী ইত্যাদি বিপন্ন ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণীর প্রাকতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা। এছাড়া আহত ও উদ্ধারকৃত বন্যপ্রাণীর চিকিৎসার জন্য সেবাশ্রম ও হাসপাতাল স্থাপন করা, সারা দেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ।  

[৬] পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানা যায়, মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ওই বনভূমিতে বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র সংরক্ষণ, লাঠিটিলার সমৃদ্ধ চিরসবুজ বনভূমিকে জবরদখলমুক্ত করে বন্যপ্রাণীর বসবাস উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি, সাফারি পার্ক স্থাপন করে ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।   পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি, সাফারী পার্কের ভেতর পর্যটকদের চলাচলের রাস্তা ও দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন বিনোদন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি, বন্যপ্রাণীদের জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, জনসচেতনতা সৃষ্টি,  জলচর ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল উন্নয়নের জন্য পুকুর ও লেক খনন এবং বৃক্ষরোপণ করার উদ্দেশ্যে এই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, জুড়ী মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।   

[৭] এই প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ৬৩১ একর এলাকায় সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করে পরিবেশবান্ধব বেষ্টনী নির্মাণ করা, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক স্থাপন করা হবে। পার্কের ভেতরে শিক্ষা ও গবেষণার, বন্যপ্রাণী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে। ২০০ হেক্টর এলাকায় ফল ও পশু খাদ্যের বাগান সৃষ্টি করা হবে। পার্কের ভেতরে ২৫ হেক্টর এলাকায় চারণভূমি, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় ২৫ হাজার চারা রোপণ,  শোভা বর্ধনকারী স্ট্রিপ বাগান সৃষ্টি, সীমানা প্রাচীর ও অভ্যন্তরীণ অ¯’ায়ী বেষ্টনী, ২টি আরসিসি বাঁধ, রিটেইনিং ওয়াল, আরসিসি রোড, ওয়াকওয়ে, জেনারেটর সহ একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে। সাইনেজ (বিল বোর্ড, ডিসেপ্ল ম্যাপ, সাইনবোর্ড) এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সিসিটিভিসহ সিকিউরিটি সিস্টেম, আইটি ব্যবস্থা, ট্রান্সটাইল গেট সমাধান সহ এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম,  সাউন্ড সিস্টেম এবং ডিজিটাল টিকেটিং ব্যবস্থা  থাকবে এ প্রকল্পে। 

[৮] চলতি ২০২৩ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) উচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প হিসাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। [৯] একনেকের অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাবে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের বিপদাপন্ন ও বিপন্ন বন্যপ্রাণী এবং উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে।